ইসলাম ডেস্ক || মিডিয়া জার্নাল
মানুষের জীবনে একদিকে রয়েছে সত্য, ন্যায়, সততা ও তাকওয়ার আলোকিত পথ; অন্যদিকে পাপ, অন্যায়, লোভ আর কামনার অন্ধকার। যখন মানুষ আলোর পথে হাঁটে, তখন মানবতা বিকশিত হয়; আর পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে সমাজে নেমে আসে অবক্ষয় ও ধ্বংস। তাই মুক্তির একমাত্র পথ হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর আনুগত্যে জীবন গঠন করা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—কীভাবে আমরা সহজ কৌশলে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ে তুলতে পারি? কোরআন, হাদিস, ইসলামী মনীষীদের উপদেশ ও আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হলো—
১. তাওবা—গুনাহমুক্ত জীবনের প্রথম ধাপ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আদম সন্তানরা সবাই ভুল করে, আর উত্তম ভুলকারী তারা, যারা তাওবা করে।” (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯)
তাওবা শুধু পাপ মোচনের পথ নয়, বরং এটি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং নতুন এক উদ্যম জাগায়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, অনুশোচনা ও সংশোধনের অঙ্গীকার মানসিক ভার লাঘব করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
২. নামাজ—গুনাহ থেকে রক্ষার ঢাল
আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সুরা আনকাবুত: ৪৫)
নিয়মিত নামাজ আল্লাহর স্মরণকে জীবন্ত রাখে। প্রতিটি সিজদা মানুষকে বিনয় শেখায়, আর প্রতিটি নামাজ আত্মাকে গুনাহ থেকে দূরে রাখে।
৩. সৎসঙ্গ—নেক পথে টিকে থাকার শক্তি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়, তাই দেখো তুমি কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩৩)
মানুষ তার পরিবেশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। তাই গুনাহমুক্ত জীবন চাইলে সৎ বন্ধু ও নেক পরিবেশের সঙ্গ প্রয়োজন।
৪. কোরআন তিলাওয়াত—অন্তরের পবিত্রতা অর্জনের উপায়
আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই এই কোরআন এমন পথের দিকনির্দেশ করে, যা সর্বাধিক সঠিক।” (সুরা ইসরা: ৯)
কোরআনের প্রতিটি আয়াত হৃদয়কে আলোকিত করে, চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে। গবেষণায়ও দেখা গেছে, নিয়মিত কোরআন পাঠ মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
৫. নফল ইবাদত—আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের সেতুবন্ধন
আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা নফল আমল দ্বারা ক্রমাগত আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালোবাসি।” (বুখারি, হাদিস: ৬৫০২)
নফল নামাজ, রোজা, দান ও তাহাজ্জুদের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্যে আসে এবং আত্মিক শান্তি লাভ করে।
৬. আত্মসমালোচনা—নিজেকে জানার এবং সংশোধনের মাধ্যম
হাসান আল-বসরি (রহ.) বলেছেন, “মৃত্যুর আগে নিজ হিসাব নাও, কারণ কিয়ামতের দিন তোমার হিসাব নেওয়া হবে।”
প্রতিদিনের শেষে নিজের কর্ম বিশ্লেষণ করলে মানুষ সহজে ভুল বুঝতে পারে এবং ভবিষ্যতে সংশোধনের সুযোগ পায়।
সবশেষে বলা যায়, গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে বড় কোনো অলৌকিক ঘটনার প্রয়োজন নেই—প্রয়োজন সচেতনতা, আত্মসংযম ও আল্লাহর স্মরণ। নিয়মিত তাওবা, নামাজ, কোরআন পাঠ, সৎসঙ্গ ও আত্মপর্যালোচনা মানুষকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দিন—আমিন।
—শিক্ষার্থী, জামিয়া ইমদাদিয়া মুসলিম বাজার, মিরপুর।



























