ইসলাম ডেস্ক || মিডিয়া জার্নাল
জীবন ও মৃত্যু মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য দুটি অধ্যায়। জীবন যেখানে পার্থিব বাস্তবতা, মৃত্যু সেখানে অনিবার্য পরকালীন সত্য।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবন ও মৃত্যু দিয়েছেন—কে কত ভালো কাজ করতে পারে, তা পরীক্ষা করার জন্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“তিনি যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমাদের পরীক্ষা নিতে পারেন—তোমাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।”
(সুরা আল-মুলক, আয়াত ২)
মৃত্যুর পরও কিছু আমল আছে, যেগুলোর সওয়াব অব্যাহতভাবে পৌঁছায়। হাদিসের আলোকে এমন কিছু কল্যাণকর কাজ নিচে তুলে ধরা হলো—
📘 ইলম শিক্ষা দেওয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কাউকে জ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর সেই জ্ঞান অনুযায়ী অন্য কেউ আমল করে—তাহলে আমলকারীর সমপরিমাণ সওয়াব শিক্ষককেও দেওয়া হবে, তবে কারো সওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।”
(ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২৪০)
👶 নেক সন্তান রেখে যাওয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন,
“মানুষ মৃত্যুর পরও চারটি আমলের সওয়াব পেতে থাকে—
১. ইসলামী সীমান্তে প্রহরার সওয়াব,
২. কোনো ভালো কাজ চালু করার ফল,
৩. অব্যাহত দান বা সদকায়ে জারিয়া,
৪. এমন নেক সন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে।”
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২২২৪৭)
🕌 মসজিদ নির্মাণ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর প্রস্তুত করেন।”
(মুসলিম, হাদিস: ১২১৮)
📖 কোরআন বিতরণ
যে ব্যক্তি মসজিদ বা মাদরাসায় পবিত্র কোরআনের কপি বিতরণ করে, তার প্রতিটি ব্যবহারে সওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে।
রাসুল (সা.) আরও বলেন,
“মানুষ মৃত্যুর পরও সাতটি আমলের সওয়াব পেতে থাকে—
ইলম শিক্ষা দেওয়া, পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা, কূপ খনন করা, গাছ রোপণ করা, মসজিদ তৈরি করা, বই দান করা এবং নেক সন্তান রেখে যাওয়া।”
(মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস: ৭২৮৯)
🌴 গাছ রোপণ
“যে মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে, আর তা থেকে কেউ ফল খায়—তা তার জন্য সদকা। এমনকি যদি কেউ চুরি করেও খায়, পাখি খায়, বা গাছ কেটে ফেলে—তবুও রোপণকারী সওয়াব পেতে থাকে।”
(মুসলিম, হাদিস: ৪০৫০)
🏠 গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া
“যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্তের জন্য ঘর তৈরি করে, ইলম শিক্ষা দেয়, কিতাব লিখে যায়, নেক সন্তান রেখে যায়, মসজিদ নির্মাণ করে বা প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করে—তার মৃত্যুর পরও এসব কাজের সওয়াব অব্যাহত থাকে।”
(ইবনু খুযাইমাহ, হাদিস: ২৪৯)
💧 পানির ব্যবস্থা করা
“প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীকে পানি পান করানোর জন্য সওয়াব রয়েছে।”
(বুখারি, হাদিস: ৬০০৯)
🛡 সীমান্ত পাহারা দেওয়া
“যে ব্যক্তি ইসলামী সীমান্তে প্রহরারত অবস্থায় মারা যায়, তার সওয়াব ও রিজিক চলতে থাকে, কবরের শাস্তি থেকে সে নিরাপদ থাকে, এবং কেয়ামতের দিন ভয়মুক্ত অবস্থায় উঠবে।”
(ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২২৩৪)
🌊 পানির প্রবাহ সৃষ্টি
“যে ব্যক্তি পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করে, তার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”
(বুখারি, হাদিস: ২৭৭৮)
🕊 আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া
“যে আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে, তার আমলনামায় সেই কর্মকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হয়, কোনো কমতি ছাড়াই।”
(মুসলিম, হাদিস: ৬৯৮০)
📚 কল্যাণকর বই বা কিতাব রচনা
যে ব্যক্তি এমন বই লিখে যায়, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয় ও সঠিক পথে চলতে শেখে, তার জন্যও অব্যাহত সওয়াব লেখা হয়।
“যে ভালো কাজের পথ দেখায়, সে কর্ম সম্পাদনকারীর মতোই সওয়াব পায়।”
(তিরমিজি, হাদিস: ২৬৭০)
💝 সদকায়ে জারিয়া
‘সদকা’ মানে দান, আর ‘জারিয়া’ অর্থ অব্যাহত।
যেমন—মাদরাসা, হাসপাতাল, এতিমখানা, পাঠাগার, সড়ক বা সেতু নির্মাণ ইত্যাদি।
রাসুল (সা.) বলেন,
“মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি নয়—
১. সদকায়ে জারিয়া,
২. এমন ইলম, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়,
৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।”
(মুসলিম, হাদিস: ৪৩১০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এমন আমল করার তাওফিক দিন, যা মৃত্যুর পরও আমাদের জন্য সওয়াবের কারণ হয়ে থাকবে, এবং আমাদের কর্মগুলো কবুল করুন। আমিন।



























