খুলনা অফিস || মিডিয়া জার্নাল
খুলনার ৬টি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা খুব শিগগিরই একসাথে ভোটের ক্যাম্পেইন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন সদর আসনের এমপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বললেন, আমরা বিভক্ত ছিলাম। বিভক্তির সেই ক্ষতগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমাদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়নি। অচিরেই শুরু করবো, তবে সেই প্রচারে কোন বিপথগামী বিতর্কিত ব্যক্তি থাকবেনা বলে সাফ জানালেন তিনি।
রবিবার খুলনা প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন মহানগর বিএনপি সভাপতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নগরবাসীর ভোটে এমপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী দু:শাসনেরকালে জাতীয় সংসদে ও রাজপথে অগনতি নেতাকর্মী নিয়ে সংগ্রামী অবদান রাখা এই নেতা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পদচ্যুত হন। তার নেতৃত্বাধীন নগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হলে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন এই প্রেসক্লাবে। প্রতিক্রিয়ায় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকেও তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। প্রতিবাদে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নজরুল ইসলাম মঞ্জু পদহীন থেকেও দলের প্রতিটি কর্মসূচি পৃথক ভাবে পালন করেছেন অনুসারীদের নিয়ে। নানা অনিশ্চয়তা, হতাশা, বঞ্চনা ও বিদ্রæপ সত্তে¡ও জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হননি তিনি। ৩ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারা দেশে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণায় খুলনা সদর আসনে চলে আসে তার নাম।
মতবিনিময় সভায় দল তাকে মনোনীত করার জন্য শুকরিয়া আদায় করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি অভিহিত করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তিনি যেভাবে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। মঞ্জু বলেন, তিনটি দিক বিবেচনায় দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে- রাজপথের আন্দোলনে সাহসী যোদ্ধা, ক্লিন ইমেজ এবং জনসম্পৃক্ত নেতা। জুলাই গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী যে নতুন বাংলাদেশের কনসেপ্ট তরুণ প্রজন্মের সামনে দাঁড়িয়েছে, সেই কনসেপ্ট উপেক্ষা করে প্রচলিত ধারার রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা এখনও প্রার্থী সম্পর্কে ভাবছে, তারা সহসা মতামত দিচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন, সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি এই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। আমাদের সবেচেয়ে আশার দিক হলো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার নির্বাচন করবেন। ফ্যাসিস্ট্ সরকার তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে বারবার উঠে আসে খুলনা বিএনপির অনৈক্য ও বিভেদের প্রসঙ্গ। প্রার্থীতা ঘোষণার ২০ দিন পরেও মহানগর এবং ওয়ার্ড-থানা পর্যায়ের নেতারা মঞ্জুর সাথে প্রচারণায় নামেননি। তারা প্রার্থীতা বিবেচনার জন্য কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছেন। আবার বিএনপি ও অঙ্গ দলে বর্তমানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘাট দখল সহ নানা অভিযোগে মিডিয়াতে নিউজ এসেছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, পত্রিকায় শিরোনাম হওয়া ব্যক্তিদের বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা হবে। এমনকি তাদেরকে শহরের বাইরেও থাকতে হতে পারে। এ বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের সাথে কথা বলেছেন জানিয়ে বলেন, শিগগিরই আলোচনায় বসে দ্বিধা বিভক্তি ঘুচিয়ে পরিচ্ছন্ন ইমেজের লোকদের নিয়ে প্রচারণায় নামবেন। কোন অপশক্তি ও বিতর্কিত ব্যক্তি বিএনপি প্রার্থীদের ধারেপাশে ঠাঁই পাবেনা বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
জুলাই অভ্যূত্থানের অন্তিমলগ্নে ৪ ও ৫ আগষ্ট ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় খুলনা প্রেসক্লাব। মূলত সে সময়কার নেতারা পেশাগত দায়িত্ব পালন ভুলে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনায় নামতেন রাস্তায়। কলংকজন সেই অধ্যায়ের কথা স্মরণ করে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আগামী দিনে কোন মার্কার পক্ষে ব্যানার টানিয়ে মাঠে নেমে না পড়ে বরং আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেই আমাদের উপকার হবে।
খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির আহবায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলের সঞ্চালনায় মতবিনিমিয় সভায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।


















