খুলনা অফিস || মিডিয়া জার্নাল
খুলনায় টার্গেট কিলিং আবারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও পুরনো শত্রুতার জেরে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা একের পর এক হত্যাকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও হত্যাকাÐের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে আতঙ্কে দিন কাটছে নগরবাসীর।
গত রোববার (১৬ নভেম্বর) রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নগরীর পৃথক দুই স্থানে ঘটে যায় নৃশংস হত্যাকাÐ। সোনাডাঙ্গা এলাকায় রাত ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রীর সামনে নির্মমভাবে হত্যা করে আলাউদ্দিন মৃধা (৩৫) কে। প্রথমে গুলি, এরপর গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত টার্গেট কিলিং-এমনই ধারণা পুলিশের। এর কিছু সময় পরই নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কালভার্টের পাশে একটি বাড়ির মুরগির খামার ঘর থেকে তিন লাশ উদ্ধার হয়। নিহতরা হলেন-নানী মহিদুন্নেছা (৫৮), তাঁর নাতি ফাতিহা আহমেদ (৬) ও মোস্তাকিম আহমেদ (৮)। তাদের শ্বাসরোধে ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে এ হত্যা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ মাসে খুলনায় মোট ৪৪ টি হত্যাকাÐ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বরে ৪, অক্টোবরে ৪, সেপ্টেম্বরে ১, আগষ্টে ৫, জুলাইতে ২, জুনে ৩, মে’তে ৫, এপ্রিলে ২, ফেব্রুয়ারিতে ১ ও জানুয়ারিতে ২টি হত্যাকাÐ ঘটে। এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড করা আরও ১৪টি হত্যাকাÐ। এই সময়ের মধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন, যা খুলনার অপরাধচিত্রকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
পুলিশের দাবি, খুলনার অধিকাংশ হত্যাকাÐ ঘুরে ফিরে মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার, পদ-পদবী ধরে রাখা, এলাকা দখল, পুরনো বিরোধ ও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্বকে কেন্দ্র করে ঘটে। অনেকে আবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ‘অপসারণ’ করছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে-সামান্য বিরোধ, আর্থিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত শত্রুতাও রক্তাক্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে।
গত এক বছরে খুলনায় বেশ কিছু হত্যাকাÐ পুরো শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর দৌলতপুরে কথিত মাদক ব্যবসায়ী কানা মেহেদীর দুই বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে, ২ অক্টোবর নেশার অর্থ না পেয়ে ছেলে লিমন নিজের বাবা লিটন খানকে শ্বাসরোধ ও গলা কেটে হত্যা করে, ৯ অক্টোবর হাউজিং বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী সবুজ খানকে, ১৭ অক্টোবর ঘরে ঢুকে গুলি করা হয় যুবক সোহেল (২৮) কে, ৩০ সেপ্টেম্বর জানালা দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবক তানভির হাসান শুভকে, ৩ আগস্ট গলা কেটে হত্যা করা হয় আল আমিনকে, ১ আগস্ট ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান মনোয়ার হোসেন টগর, ১১ জুলাই বাসার সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয় মাহবুবুর রহমানকে, ১৫ মার্চ চরমপন্থি নেতা শেখ শাহীনুল হক শাহীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাত নামলেই অনেক এলাকায় ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি হয়। মোটরসাইকেলে করে গুলি ছোড়া, বাড়িতে ঢুকে হামলা, প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা -এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে। নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, “এখন আর কোনো ঝগড়াকেও ছোট করে দেখা যায় না। কখন কী হয়ে যায়-তার নিশ্চয়তা নেই।”
কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমরায় রায় বলেন, “খুলনাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, মোটরসাইকেল টহল বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি যে হত্যাগুলো ঘটছে-এর বেশিরভাগই টার্গেট কিলিং। প্রতিটি ঘটনায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।


















