ডেস্ক রিপোর্টার || মিডিয়া জার্নাল
চীনে সাম্প্রতিক সময়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র হয়েছে। গত এক সপ্তাহেই বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ৩০ জন খ্রিষ্টানকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রার্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন এক খ্রিষ্টান ধর্মযাজক। পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার মেয়ে গ্রেস জিন ড্রেক্সেল বাবার কাছ থেকে একটি বার্তা পান, যেখানে তাকে নিখোঁজ ধর্মযাজকের জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর তার মা ফোনে জানান, তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এতে গ্রেস বুঝতে পারেন, তার বাবাও একই ঘটনার শিকার হয়েছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনে সম্প্রতি পাস হওয়া একটি নতুন আইন এই ধরপাকড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। আইনটি মূলত গির্জার গোপন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত।
রাষ্ট্রীয়ভাবে নাস্তিক অবস্থান নেওয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেশটি পরিচালনা করলেও সেখানে বিপুল সংখ্যক খ্রিষ্টান নাগরিক রয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ৬০ লাখের মতো ক্যাথলিক বাস করেন।
২০০৫ সালের পর থেকে এবং বিশেষত ২০১৮ সালে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার হয়। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং “ধর্মের জাতীয়করণ” প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী, সরকারের অনুমোদন ছাড়া জনসমক্ষে উপাসনা করা নিষিদ্ধ হয়। এর ফলে ভূগর্ভস্থ অনেক গির্জা যেমন জায়ন চার্চ বাধ্য হয়ে অনলাইন উপাসনা চালু করে, কিংবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে একাধিক যাজককে গ্রেপ্তার ও দণ্ড দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কর্তৃপক্ষের অবস্থান আরও কঠোর হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে, শি’আনের ‘লাইট অব জায়ন’ চার্চের যাজক গাও কোয়ানফুকে ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আটক করা হয়। জুনে, শানসির ‘লিনফেন গোল্ডেন ল্যাম্পস্ট্যান্ড’ চার্চের কয়েকজন সদস্যকে জালিয়াতির অভিযোগে দীর্ঘ মেয়াদি কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা অনেকের মতে ছিল অন্যায্য রায়।
সেপ্টেম্বরে ধর্মীয় কর্মীদের জন্য নতুন অনলাইন আচরণবিধি জারি করে চীন, যেখানে কেবল অনুমোদিত সংগঠনগুলোকেই অনলাইনে ধর্মীয় প্রচার চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রেস জিন ড্রেক্সেল জানান, গত কয়েক মাসে জায়ন চার্চের সদস্যরা পুলিশের ঘন ঘন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। গত শুক্রবার ও শনিবার বেইজিং, সাংহাইসহ অন্তত ১০টি শহরে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালায়। এতে গুয়াংজি প্রদেশের বেইহাই শহর থেকে জিন মিংগ্রি ছাড়াও আরও কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ও গির্জা সদস্যকে আটক করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জায়ন চার্চের যাজক ও মুখপাত্র শন লং বলেন, “চীনে ধর্মীয় নিপীড়নের নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে, এবং এবার গির্জাগুলো সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লন্ডনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, “চীনের নাগরিকরা আইনের অধীনে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন। তবে সব ধর্মীয় সংগঠনকে রাষ্ট্রের আইন ও বিধি মেনে চলতে হবে।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মন্তব্যের জবাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তথাকথিত ধর্মীয় ইস্যুতে মার্কিন হস্তক্ষেপ আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।



























