ঢাকা অফিস || মিডিয়া জার্নাল
যুক্তরাজ্যভিত্তিক উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ (THE) প্রকাশ করেছে ২০২৫ সালের বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং। তবে দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই শীর্ষ ৮০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রকাশিত এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের মোট ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০১ থেকে ১০০০ র্যাংকিং পর্যায়ে রয়েছে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আর ১০০১ থেকে ১২০০ র্যাংকে অবস্থান করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য অগ্রগতি
‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) গত বছর ১০০১–১২০০ এর মধ্যে থাকলেও এবার উন্নতি করে ৮০১–১০০০ তালিকায় প্রবেশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সামগ্রিক স্কোর ৩৫.৫ থেকে ৩৮.৯ এর মধ্যে।
শিক্ষা, গবেষণা পরিবেশ, গবেষণার মান, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিল্পক্ষেত্রের সহযোগিতা—এই পাঁচ সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে র্যাংকিং।
ঢাবি গবেষণার পরিবেশে ৩ পয়েন্ট, গবেষণার মানে ৯.৩ পয়েন্ট, এবং শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতায় ১১.৮ পয়েন্ট উন্নতি করেছে। তবে শিক্ষার মান সূচকে কিছুটা অবনতি হয়েছে— ২০.১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৭।
ড্যাফোডিলের অবস্থান অপরিবর্তিত
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিও ৮০১–১০০০ পর্যায়ে অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষায় ১২.১, গবেষণায় ১৩.০, গবেষণার মানে ৮১.৭, শিল্প সহযোগিতায় ২০.১, এবং আন্তর্জাতিক আউটলুকে ৬৫.৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষে কারা
২০২৫ সালের র্যাংকিংয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মোট ৯৮.৫ রেটিং নিয়ে।
এরপর দ্বিতীয় স্থানে এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি), তৃতীয় স্থানে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, চতুর্থে ক্যামব্রিজ, এবং পঞ্চমে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
এশিয়ার মধ্যে ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১–২৫০ র্যাংকে এবং পাকিস্তানের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ৮০০-এর মধ্যে স্থান পেয়েছে।
কেন পিছিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যদিও র্যাংকিংয়ে সামান্য উন্নতির জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তবুও বেশ কিছু কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ঢাবির অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে ঢাবি এখনো অনেক পিছিয়ে—প্রতি ১৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক, যেখানে অক্সফোর্ডে এ অনুপাত ১০:১।
অনেক বিভাগে এখনো বড় ক্লাসে ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পাঠ নিচ্ছে, যা মানসম্মত শিক্ষায় প্রভাব ফেলছে।
এছাড়া অনেক গবেষণা কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়, নিয়মিত পরিচালক নিয়োগ হয় না, এবং কিছু বিভাগে গবেষণা কার্যক্রম এখনো পাঠ্যক্রমের অংশ নয়। এসব কারণে গবেষণা পরিবেশ সূচকে ঢাবির স্কোর মাত্র ১৩.৩, যেখানে অক্সফোর্ডের স্কোর ১০০।
আরেকটি বড় দুর্বলতা হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের স্বল্পতা। টাইমসের তথ্যমতে, ঢাবিতে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ০%।
উন্নয়নের উদ্যোগ
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে অবস্থান উন্নত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ।
এই কমিটি শিক্ষার মান, গবেষণার গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।



























