চাকরির প্রস্তুতির জন্য ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি শেখানোর মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছিলেন শামীম হোসেন। সেই জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে তিনি ডাকসুর ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাঁর কথা বলার ধরন ও আবৃত্তির ভিডিও পছন্দ করলেও ভোটে জয়ী হতে পারেননি তিনি। তবে ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের এই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানান, ভোটের আগে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়, যা তাঁকে মানসিকভাবে কষ্ট দিয়েছে। তবে ভোট শেষে আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, রাজনীতিতে নৈতিকতার অভাব তাঁকে হতাশ করেছে, তাই তিনি ভবিষ্যতে পড়াশোনাকেই অগ্রাধিকার দিতে চান এবং এডুকেশন সাইকোলজি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
এবারের ডাকসু ভিপি পদে লড়েছেন ৪৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে জিএস পদে অংশ নিয়েছেন ১৯ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র আরাফাত চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’ নামে ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ছিলেন। প্রচারণায় খুব আলোচনায় না আসলেও ভোটে তিনি ৪ হাজার ৪৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, ভোটের ফলাফল কারসাজি করে ‘একপক্ষীয়ভাবে সাজানো’ হয়েছে এবং এ বিষয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জমা দেবেন।
ডাকসুর মোট ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। আলোচনায় রয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭ হাজার ৭৮২ ভোট) এবং সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী (৭ হাজার ৬০৮ ভোট) শিবিরের সমর্থন পেয়েছিলেন।
ভিপি পদে প্রবীণতম প্রার্থী ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী মুহাম্মাদ আবু তৈয়ব হাবিলদার। তিনি ভোট পান মাত্র ১০টি। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল আহমদ নির্বাচনের আগে সহপাঠীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলেও ভিপি পদে ৮ ভোট পেয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে আলোচিত নাম সানজিদা আহমেদ (তন্বি), যিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। তিনি গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে ১১ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন—যা এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে ভিপি হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম। সানজিদা জানিয়েছেন, গবেষণাক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাই তাঁকে এই পদে এগিয়ে দিয়েছে এবং এখন তিনি প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে মনোযোগী হবেন।
ডাকসুর সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া, যিনি প্রচারণাকালে তাঁর বক্তব্য ও চিন্তাধারার জন্য ভাইরাল হয়েছিলেন। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ২০৯ ভোট।
অন্যদিকে ব্যতিক্রমী প্রচারণার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান। তাঁর সানগ্লাস, সিগারেট ও লাইটার হাতে তোলা ছবি এবং ‘ডাকসুতে দাঁড়াইছে সবাই, বসে আছে একজনই’ স্লোগান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভোটে তিনি পান ৫২৬ ভোট। তাঁর মতে, নিজের প্রচেষ্টার তুলনায় তিনি যথেষ্ট ভোটই পেয়েছেন।