খুলনা অফিস || ভয়েজ অফ জাস্টিস

চার বছরের ব্যবধানে তিনগুন বেড়েছে রেলভূমির ভাড়া। প্রতি বর্গফুট জায়গার ভাড়া ৭০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দু’শ টাকায়। ভ্যাট ও আয়করসহ একজন ব্যবসায়ীকে পরিশোধ করতে হবে ২৪০ টাকা। গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় নতুন এই নীতিমালা জারি করা হয়।
এর ফলে রেলের জমিতে একশ’ বর্গফুটের ছোট একটা দোকানের ভাড়া ছিল ৭ হাজার টাকা, একলাফে তা বেড়ে ২৪ হাজার হয়েছে। তুলনামূলক বড় দোকান, গুদাম এবং আড়তের ভাড়া (এক হাজার বর্গ ফুট) আগে ছিল ৭০ হাজার টাকা। সেই ভাড়া বেড়ে এখন হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে রেলভূমি ব্যবহারকারী খুলনার ৬ হাজার ব্যবসায়ী।
রেলওয়ের জমি বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসায় জড়িত ১৮ টি সংগঠনের নেতারা বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ভাড়া বাড়ানোর পূর্বে কোন ধরনের গণশুনানী না করে মন্ত্রণালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে হঠকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। অযৌক্তিক ভাড়া প্রত্যাহার না হলে তারা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান সহ ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসুচি নেবেন এবং চূড়ান্ত পর্বে রেল ভবন ঘেরাও করবেন বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কিছুদিন আগেও রেল ভূমির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এরপর ভাড়া বাড়িয়ে ৫০ টাকা এবং ২০২১ সালে ৭০ টাকা করা হয়। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে গত ১ জুলাই থেকে সেই ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা করা হয়েছে। ভ্যাট ও আয়কর মিলিয়ে ভাড়া পড়ছে প্রতি ফুট ২৪০ টাকা। অথচ ভৈরব নদের তীরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ব্যবসায়ীদের কাছে ভূমি ভাড়া দেয় প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকায়। জেলা প্রশাসনও ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা বা ভাড়া দেন প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা ৮৮ পয়সায়।
রেলের বিপুল পরিমাণ পতিত জমি বরাদ্দ নেয়া ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে ডোবা-নালা ভরাট, ময়লার স্তুপ অপসারণ করে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা নিজ অর্থ জমিতে বিনিয়োগ করে উল্টো দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়েকে ভাড়া প্রদান করে আসছেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে ট্রেড লাইসেন্স ফি, সরকারকে মোটা অংকের ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করছেন। কোন ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই রেল যেভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করছে সেটা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক প্রকার জুলুম।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, রেলের জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠা প্রায় ৬ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারী। বিনিয়োগ হয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। এখন তিনগুণের বেশি ভাড়া দিতে গেলে সব ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা রেলভূমি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক শরীফ আতিয়ার রহমান, সদস্য সচিব মো: আবু সাঈদ, খুলনা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মুনীর আহমেদ, চেম্বারের অন্যতম পরিচালক মনিরুল ইসলাম মাসুম প্রমুখ।

