খুলনা অফিস || ভয়েজ অফ জাস্টিস

খুলনার কেশবচন্দ্র সংস্কৃত কলেজের অভ্যন্তরে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন ইসকনের একটি অংশ। কলেজ প্রতিষ্ঠাতার দলিলে উল্লিখিত শর্ত লংঘন করে মন্দিরের সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার ক্ষুব্ধ করে তুলছে অন্যদেরকে। লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা ইস্যূতে দু’পক্ষ প্রায়শই মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় বাড়ছে উত্তেজনা। ইসকন অনুসারীদের আমন্ত্রণে রাষ্ট্র্রদ্রোহ ও হত্যা মামলায় কারাবন্দী চিন্ময় মহাপ্রভু এই প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। পরিকল্পনা করেছিলেন সনাতন মহাসভা করার। যে কারণে কলেজ সংশ্লিষ্টরা দখলদার ইসকন অংশকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর আখ্যায়িত করে দেশে পরিকল্পিত অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
নিজ ভূমিতে পরবাসীতে পরিণত হওয়া কেশবচন্দ্র সংস্কৃত কলেজ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের দাবি, খুলনা পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান মহেন্দ্র কুমার ঘোষ ১৯৩৮ সালে দলিলের মাধ্যমে খুলনা পৌরসভার অনুকূলে সংস্কৃত কলেজ ও রাধা মাধব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। দলিল অনুযায়ী ১০ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাক্ষণ হবেন, যিনি একই সাথে রাধা মাধব মন্দিরের পূজারী হবেন। তাদের দাবি, ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম ইসকন সদস্যরা খুলনায় আসেন। মহানগরী খুলনায় তাদের থাকার কোন জায়গা না থাকায় সংস্কৃত কলেজে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১১ সালে নগরীর গল্লামারীতে ইসকনের নিজস্ব সম্পত্তিতে মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হলে গেরুয়া পোশাকধারী সদস্যরা সেখানে চলে যান। কিন্ত সাদা পোশাকধারী কতিপয় ইসকন সদস্য কলেজে অবস্থান নেন। দাতার দলিলের শর্ত লংঘন করে কলেজ অধ্যক্ষকে রাধা মাধব মন্দিরের পূজা করতে না দিয়ে তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি বোর্ডের অধীনে কেশবচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে এখন প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী আছে। ইসকন সদস্যরা ভবনের যে স্থানটি বর্তমানে রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন, সেখানে যেতে গেলে ক্লাসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাদের রান্নার উপকরণ ও পোশাক আশাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ক্লাসের ভেতরে। ক্লাস চলাকালে রান্নার কাজ চললে মশলা কষানোর গন্ধ ও ধোয়ায় টিকে থাকা দুস্কর হয়ে পড়ে। আগে রান্নাঘর যেখানে ছিল সেখানে কেশবচন্দ্র সার্বজনীর দূর্গা মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। ইসকন সদস্যদের অনুরোধ করা হয়েছে বাইরে খোলা চত্বরে রান্না করতে। কথা কানে তোলা দূরের কথা, বরং কলেজ কমিটির বিরুদ্ধে গত বুধবার মিছিল ও মানববন্ধন করে অশ্রাব্য ভাষায় বিষোদগার করা হয়েছে।
ঘটনার জন্য মূলত খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুন্ডুকে দায়ি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী চিন্ময় দাসের সহযোগী ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর প্রশান্ত কুন্ডু পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থির করার পায়তার করছে। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট বিজন কৃষ্ণ মন্ডল, অ্যাডভোকেট আনন্দ দাস, বলরাম দাস, সঞ্জিব বনিক, শুভ্রদেব দে দীপ, বিশ^জিৎ দে মিঠু, রতন দেবনাথ, টুটুল দত্ত, অশোক দে গং। এদের আমন্ত্রণে গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন আগে বিতর্কিত ধর্ম নেতা চিন্ময় দাস এখানে এসেছিলেন। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন কলেজ কমিটির সভাপতি দেবাংশু কুমার চক্রবর্তী। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কলেজ অধ্যক্ষ সুদর্শন চক্রবর্তী, অর্থ সম্পাদক ডা. কৃষ্ণপদ রায়, কেসিসির প্রতিনিধি উজ্জল কুমার সাহা, সদস্য রঞ্জন দে।
দুপুরে নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড কেশবচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজনে শতাধিক লোকের জন্য নিরামিশ রান্না হয়েছে। অতিথিরা আসতেও শুরু করেছেন। রান্নাঘরে যাতায়াত ক্লাস রুমের ভেতর দিয়ে। দোতলায় সিড়ির দোড়গোড়ায় বসে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য ও রাধা মাধব মন্দিরের সেবায়েত বৈষ্ণব বলরাম দাস। বলেন, গল্লামারীতে ইসকনের নিজস্ব মন্দির নির্মাণের পর সবাই চলে গেলেও রাধা মাধবের সেবার জন্য তারা রয়ে যান। রাধা মাধবের সেবার জন্য বৈষ্ণব হতে হবে, ব্রাক্ষণ এ কাজ পারবেনা বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে জানতে পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুন্ডুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, নামে কলেজ হলেও এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলতো না। কিছু ছাত্র থাকতো সন্ত্রাসী প্রকৃতির। ট্রাস্টের জমিতে সেন্ট্রাল ক্লাব করা হয়েছিল। সেখানে জুয়া ও মাদক চলতো। আমাদের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়, আর ইসকনের সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তিনি বলেন, সনাতন জাগরনী মঞ্চের আমন্ত্রণে চিন্ময় দাস খুলনায় এসেছিলেন। ধ্রুব মহারাজ দায়িত্বে ছিলেন। আমন্ত্রিত হয়ে আমি উমেশচন্দ্র লাইব্রেরীতে তার বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলাম। উনি নিরামিস খান, সেজন্য কেশবচন্দ্র সংস্কৃত কলেজে ইসকনের ওখানে খেতে গিয়েছিলেন। দেশকে অস্থির করা বা ফ্যাসিস্টের দোসর নামে যে ট্যাগ তাকে দেওয়া হচ্ছে তিনি এর নিন্দা জানান।

