ডেস্ক রিপোর্টার || ভয়েজ অফ জাস্টিস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের দিনে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে বিরল মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ রুবেল হোসেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি একে একে ৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছে দেন, কোনো ভাড়াও নেননি।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৩১ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন আহত হন। অন্য রিকশাচালকেরা আতঙ্কে এলাকা ছাড়লেও রুবেল উল্টো এগিয়ে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এখনো তাঁর অটোরিকশার আসনে রক্তের দাগ রয়ে গেছে সেই দিনের স্মৃতি হিসেবে।
রুবেল মূলত কুমিল্লার লাকসামের বাসিন্দা। ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দৈনিক কখনো ৩০০, কখনো ৫০০ টাকা আয় হয় তাঁর। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চলছে তাঁর সংসার। সীমিত আয়ের মানুষ হলেও ওই দিনের ঘটনা প্রমাণ করেছে, মানবিকতায় তিনি অদ্বিতীয়।
সংঘর্ষের দিন রুবেলও প্রথমে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্থানীয় ভেবে আঘাত করে, এমনকি রিকশার চাবিও ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও তিনি থেমে যাননি। রুবেল বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমার আপনজনের মতো। ওরাই তো আমাদের আয়ের উৎস। তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোই আমার দায়িত্ব।”
সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত না খেয়েই তিনি আহতদের একের পর এক হাসপাতালে নিয়ে যান। এক শিক্ষার্থী পরে জোর করে তাঁকে বিস্কুট আর পানি খাইয়ে দেন, যাতে তিনি কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ‘মানবিকতার অনন্য উদাহরণ’ হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ বলেন, “৮৩ জন আহত শিক্ষার্থীকে বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে নেওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে এক বিরল উদাহরণ। রুবেলের সততা, সরলতা ও দায়িত্ববোধ আমাদের মুগ্ধ করেছে।”
রুবেল নিজে অবশ্য কোনো কৃতিত্ব নিতে চান না। তাঁর ভাষায়, “সেদিন আমাকে শুধু বিবেকই চালিয়েছে। টাকার কথা মাথায়ই আসেনি। পরে পুরস্কার দিয়েছে, কিন্তু আমি চাইনি। তবে আমার পরিবার গর্ববোধ করেছে, এটিই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

