ঢাকা অফিস || ভয়েজ অফ জাস্টিস

সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দিনভর বৈঠকে কোনো সমঝোতা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রত্যেক দল নিজেদের পূর্বের অবস্থানেই অনড় থাকে। কমিশন জানিয়েছে, আগামী রোববার আবারও বৈঠক হবে।
এর আগে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় কমিশন বিভিন্ন প্রস্তাব পেয়েছিল। লিখিতভাবে মতামত পাঠানো ২৯ দলের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে তিন রকমের প্রস্তাব দেয়। বিএনপির মতে, সংসদ গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যেই সংস্কার কার্যকর করা সম্ভব। জামায়াত চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ অথবা গণভোটের মাধ্যমে এগোনো হোক। আর এনসিপি মনে করে, নতুন গণপরিষদ গঠন ছাড়া টেকসই বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।
গতকালের আলোচনায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তর্ক-বিতর্ক চললেও দলগুলো নিজেদের অবস্থান বদলায়নি। কমিশন জানায়, জুলাই সনদে মোট ছয়টি বড় সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত আছে। এর মধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঐকমত্য হয়েছে, যেগুলো চূড়ান্ত খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। তবে সংবিধান-সম্পর্কিত অংশ বাস্তবায়ন নিয়েই প্রধান জটিলতা তৈরি হয়েছে।
দলের অবস্থান ও যুক্তি
বিএনপির প্রতিনিধি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা চলমান থাকায় এখন বিশেষ আদেশ বা গণভোটের মতো প্রস্তাব কার্যকর করা যাবে না। এতে দেশে দুটি সংবিধান পাশাপাশি চলবে এবং আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই তাঁদের প্রস্তাব—সব দল এখন কেবল সনদে অঙ্গীকার করবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে তা অন্তর্ভুক্ত করবে। এরপর আগামী সংসদে গিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে।
অন্যদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংস্কার কার্যক্রমকে সংসদের হাতে ছেড়ে দিলে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ক্ষুণ্ন হবে। তাঁর প্রস্তাব—প্রথমে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে, প্রয়োজনে পরে গণভোটের মাধ্যমে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, পুরোনো সংবিধানে সামান্য ঘষামাজা করে সংস্কার টেকসই হবে না। তাঁদের মতে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠনই একমাত্র কার্যকর পথ।
ঐকমত্যের জায়গা
যদিও সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ রয়ে গেছে, তবে দুটো বিষয়ে গতকালের বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। প্রথমত, যে প্রস্তাবগুলো সংবিধান-সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, যেসব বিষয় নির্বাহী আদেশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলোও দ্রুত কার্যকর হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠক শেষে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য পাঠানো হয়েছে। আগামী শনিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রতিটি দলকে দুজন নেতার নাম কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে, যাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন। তবে সইয়ের তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
কমিশনের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, বাকি মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠা গেলে জুলাই সনদে সব দলের সম্মিলিত স্বাক্ষর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

