ঢাকা অফিস || ভয়েজ অফ জাস্টিস

ডাকসু নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের বড় পরাজয় ঘিরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে শুরু হয়েছে দফায় দফায় আলোচনা ও সমালোচনা। ভোটে ভরাডুবির পর থেকে দলটির ভেতরে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলছে।
এনসিপি নিজেকে তরুণনির্ভর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়। সে কারণে ডাকসু নির্বাচনকে অনেকে দলের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছিলেন। গত এক বছর ধরে নির্বাচনী কার্যক্রমেও সক্রিয় ছিলেন নেতারা। কিন্তু ভোটের মাঠে সেই তৎপরতার সঠিক প্রতিফলন মেলেনি।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদকে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে প্রায়শই এনসিপির ছাত্রসংগঠন হিসেবে দেখা হয়। এবারের নির্বাচনে তাদের ভিপি প্রার্থী ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আলোচনায় আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। আর জিএস পদে লড়েছিলেন আরেক সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। দুজনেই ভোটে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করেন। অন্য প্রার্থীরাও তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি।
ফলাফল ঘোষণার পর এনসিপির ভেতর থেকে সমালোচনার তীর ছোড়া শুরু হয়। দলটির একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে থেকেই একটি বিশেষ দলের প্রভাবের আশঙ্কার কথা জানানো হলেও তা ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে ছাত্রসংসদ–সমর্থিত প্যানেলের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
অনেকের মতে, ডাকসুর এই ব্যর্থতা এনসিপির ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এমনকি ক্ষোভে এক নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন দাবি করেন, ফলাফল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও পদত্যাগের খবর সঠিক নয়। তাঁর মতে, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এখনো নবীন সংগঠন। সাংগঠনিক ভিত মজবুত হলে ভবিষ্যতে তারা ভালো করবে।
অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের সাফল্যকে অনেকে তুলনা টেনে দেখছেন। প্রচলিত ধর্মভিত্তিক অবস্থান থেকে সরে এসে তারা মধ্যপন্থী ও লিবারেল ধারায় প্রচারণা চালিয়েছে—যা ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
ভরাডুবির কারণ খুঁজছে এনসিপি
নেতাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে উঠে এসেছে কয়েকটি বিষয়—
-
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভেতরে বিভাজন প্রকট হয়ে ওঠা।
-
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট আকর্ষণ করতে না পারা।
-
একই পদে একাধিক নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।
-
অনেকে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করে অন্য প্যানেলে যোগ দেওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া।
ক্যাম্পাসে সক্রিয় কয়েকজন ভোটারও মনে করছেন, এনসিপি ও ছাত্রসংসদ নেতাদের সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক, যেমন চাঁদাবাজির অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অযথা বির্তক ও বাগাড়ম্বরে জড়িয়ে পড়া, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
স্বীকারোক্তি
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার স্বীকার করেন, জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে অনেকেই পরিচয় গোপন করে সংগঠনে ঢুকে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সংগঠন শক্তিশালী করতে না পারায় সেই বিভাজন প্রকাশ্য হয়েছে। আর এ কারণেই ডাকসুতে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।

